Header Ads

ইসলামে পিতা- মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের গুরুত্ব, পুরস্কার ও দূর্ব্যবহারের শাস্তি!





দীর্ঘ দিন সীমাহীন কষ্ট ও অবর্ণনীয় যাতনা সহ্য
করে মা সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেন। মায়ের
পেটে সন্তান যতই বৃদ্ধি পেতে থাকে তার
কষ্টের মাত্রা ততই বাড়তে থাকে। মৃত্যু যন্ত্রনা
পার হয়ে যখন সন্তান ভূমিষ্ট হয় তখন এ
নবজাতককে ঘিরে মায়ের সব প্রত্যশা এবং
স্বপ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে। এই নবজাতকের
ভিতর সে দেখতে পায় জীবনের সব রূপ এবং
সৌন্দর্য। যার ফলে দুনিয়ার প্রতি তার আগ্রহ
এবং সম্পর্ক আরো গভীরতর হয়। পরম আদর-যত্নে
সে শিশুর প্রতিপালনে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।
নিজের শরীরের নির্যাস দিয়ে তার খাবারের
ব্যাবস্থা করে। নিজে কষ্ট করে তাকে সুখ দেয়।
নিজে ক্ষুর্ধাত থেকে তাকে খাওয়ায়। নিজে
নির্ঘূম রাত কাটায় সন্তানের ঘুমের জন্য। মা
পরম আদর আর সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে
সন্তানকে ঘিরে রাখে সর্বক্ষণ। সন্তান কোথাও
গেলে আল্লাহর নিকট দুআ করে যেন তার সন্তান
নিরাপদে ঘরে ফিরে আসে। সন্তানও যে কোন
বিপদে ছুটে আসে মায়ের কোলে। পরম
নির্ভরতায় ভরে থাকে তার বুক। যত বিপদই আসুক
না কেন মা যদি বুকের সাথে চেপে ধরে কিংবা
স্নেহ মাখা দৃষ্টিতে একবার তাকায় তাহলে সব
কষ্ট যেন নিমিষেই উধাও হয়ে যায়। এই হল মা।
আর পিতা? তাকে তো সন্তানের মুখে এক
লোকমা আহার তুলে দেয়ার জন্য করতে হয়
অক্লান্ত পরিশ্রম। মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে
হয়। সহ্য করতে হয় কতধরণের কষ্ট এবং ক্লেশ।
সন্তানের জন্যই তো তাকে কখনো কখনো
কৃপনতা করতে হয়। কখনো বা ভীরুতার পরিচয়
দিতে হয়। সন্তান কাছে গেলে হাঁসি মুখে তাকে
বুকে টেনে নেয়। তার নিরাপত্তা ও শান্তির
জন্য সে যে কোন ধরণের বিপদের সম্মুখীন
হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে। ইত্যাদি কারণে
আমাদের অস্তিতের প্রতিটি কোণা পিতা-
মাতার নিকট ঋণী। আর তাই তো আল কুরআনে
আল্লাহ তা’আলার ইবাদতের পরই পিতা-মাতার
প্রতি সদাচারণ করার কথা উচ্চারিত হয়েছে
বার বার। ইরশাদ হচ্ছেঃ “তোমার প্রতিপালক
নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া অন্য
কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার
প্রতি সদ্ব্যবহার করবে; তাদের একজন অথবা
উভয়ে উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে
উপনীত হলেও আদেরকে বিরক্তি সূচক কিছু বলো
না। এবং তাদেরকে ভর্র্ৎসনা করো না; তাদের
সাথে কথা বলো সম্মান সূচক নম্র কথা।” [সূরা
বনী ইসরাঈলঃ ২৩]
আল কুরআনের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষ্যকার,
প্রখ্যাত সাহাবী অবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাঃ)
বলেনঃ আল কুরআনে এমন তিনটি আয়াত আছে
যেখানে তিনটি জিনিস তিনটি জিনিসের
সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। একটি ছাড়া
অন্যটি অগ্রহণযোগ্য। সে তিনটি আয়াত হলঃ
১) আল্লাহ তাআলা বলেন: “হে মুমিনগণ, তোমরা
আল্লাহর আনুগত্য কর এবং আনুগত্য কর তার
রাসূলের। এবং (তাদের বিরুদ্ধাচারণ করে)
নিজেদের আমল বিনষ্ট কর না।” [সূরা মুহাম্মাদ:
৩৩]
কেউ যদি আল্লাহর আনুগত্য করে কিন্তু রাসূলের
আনুগত্য না করে তাহলে তা আল্লাহর কাছে
গ্রহণযোগ্য হবে না।
২) আল্লাহ তায়ালা বলেন: “এবং তোমরা
সালাত (নামায) আদায় কর এবং যাকাত
দাও।” [সূরা বাক্বারাঃ ৪৩]
কেউ যদি নামায পড়ে কিন্তু যাকাত দিতে
রাজী নয় তাহলে তাও আল্লাহর দরবারে
গ্রহণীয় নয়।
৩) আল্লাহ তায়ালা বলেন: “আমার কৃতজ্ঞতা
এবং তোমার পিতা-মাতার কৃতজ্ঞতা আদায়
কর।” [সূরা লোকমানঃ ১৪]
কেউ যদি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করে কিন্তু
পিতা-মাতার কৃতজ্ঞতা আদায় না করে তবে
তা আল্লাহর নিকট প্রত্যাখ্যাত। সে কারণেই
মহাগ্রন্থ আল কুরআনে একাধিকবার আল্লাহর
আনুগত্যের নির্দেশের সাথে সাথে পিতা-
মাতার আনুগত্য করার প্রতি নির্দেশ এসেছে।
ধ্বনীত হয়েছে তাদের সাথে খারাপ আচরণ করার
প্রতি কঠিন হুশিয়ারী। তা যে কোন কারণেই
হোক না কেন। ইরশাদ হচ্ছে:“তোমরা আল্লাহর
ইবাদত কর। এবং তার সাথে কাউকে শরীক কর
না আর পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার
কর।” [সূরা নিসাঃ ৩৬]
আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন: “আমি
মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার পিতা-মাতার
প্রতি সদ্ব্যবহার করতে।” [সূরা আনকাবূতঃ ৮]
তিনি আরও বলেন: “আর আমি তো মানুষকে তার
পিতা-মাতার প্রতি সদাচারণের নির্দেশ
দিয়েছি। তার জননী তাকে (সন্তানকে) কষ্টের
পর কষ্ট বরণ করে গর্ভে ধারণ করে এবং তার দুধ
ছাড়ানো হয় দুই বছরে। সুতরাং আমার প্রতি ও
তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও।
প্রত্যাবর্তন তো আমারই নিকট।” [সূরা
লোকমানঃ ১৪]
উল্লেখিত আয়াতগুলোতে স্পষ্টভাবে পিতা-
মাতার মর্যাদা এবং তাদের প্রতি সন্তানদের
অধিকারের প্রমান বহন করছে।
প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) হাদীস থেকেঃ নবী করীম
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর
হাদীস থেকেও এ ব্যাপারে স্পষ্ট প্রমাণ
পাওয়া যায়ঃ
১) পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর
সন্তুষ্টিঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “পিতা-মাতার সন্তুষ্টির
উপরই আল্লাহর সন্তুষ্টি আর পিতা-মাতার
অসন্তষ্টির উপরই আল্লাহর সন্তুষ্টি নির্ভর
করছে।” [ত্ববারানী কাবীর-সহীহ]

No comments

Powered by Blogger.